ধরেই নিলাম, বিসিএসে আপনি চাকরিটা পাবেন, এর সম্ভাবনা মাত্র ১ শতাংশ। পরীক্ষা তো দেবেনই, নাকি? পরীক্ষা যদি দিতেই হয়, তবে পড়াশোনা না করে দিয়ে কী লাভ? দায়িত্ব নিয়ে বলছি, প্রতিটি বিসিএসে মাত্র ১ শতাংশ সম্ভাবনায় ৭০ শতাংশ লোক চাকরি পান। ওঁরা যদি পান, তবে আপনি কেন পাবেন না? শত ভাগ এফর্ট দিয়ে পড়াশোনা শুরু করে দিন, এই মুহূর্ত থেকেই!
আমার নিজের মতো করে কিছু পরামর্শ দিচ্ছি। এগুলো আপনার মতো করে কাজে লাগাবেন।
১. নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হওয়া একেবারেই বন্ধ করে দিন।
২. প্রতিদিন পড়াশোনা করুন অন্তত ১৬ ঘণ্টা; চাকরিটা ছাড়া সম্ভব না হলে অন্তত সাত ঘণ্টা। এ সময়টাতে পাঁচ ঘণ্টার বেশি ঘুম একধরনের বিলাসিতা। বিশ্বাস করে নিন, আপনি আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে যত মিনিট কম ঘুমাবেন, ওনার তুলনায় আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি।
৩. একটা বিষয় পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়লে আপনার পছন্দের সহজ বিষয়টি পড়া শুরু করুন।
৪. ফোন রিসিভ করা, ফেসবুকিং, সামাজিকতা কমিয়ে দিন। পড়ার টেবিল থেকে মুঠোফোনটি দূরে রাখুন।
৫. অনুবাদ, অঙ্ক, ব্যাকরণ, মানসিক দক্ষতা প্রতিদিনই চর্চা করুন।
৬. অমুক তারিখের মধ্যে অমুক সাবজেক্ট বা টপিক, যত কষ্টই হোক, শেষ করে ফেলব—এই টার্গেট নিয়ে পড়ুন।
৭. পড়ার সময় লিখে পড়ার তেমন প্রয়োজন নেই; বরং বারবার পড়ুন। প্রশ্ন অত কমন আসবে না, আপনাকে এমনিতেই বানিয়ে বানিয়ে লিখতে হবে।
৮. নম্বর ও প্রশ্নের গুরুত্ব অনুসারে কোন প্রশ্নে কত সময় দেবেন, এটা অবশ্যই ঠিক করে নেবেন।
৯. সব সাজেশন দেখবেন, কিন্তু কোনোটাই ফলো করবেন না। আগের বছরের প্রশ্ন আর কয়েকটা সাজেশন ঘেঁটে নিজের সাজেশন নিজেই বানান।
১০. রেফারেন্স বই কম পড়ে গাইডবই বেশি পড়ুন। পাঁচটি রেফারেন্স বই পড়ার চেয়ে একটি নতুন গাইডবই উল্টেপাল্টে দেখা ভালো।
১১. লিখিত পরীক্ষায় আপনাকে উদ্ধৃতি আর তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রাসঙ্গিকভাবে প্রচুর লিখতে হবে। বাংলায় গড়ে প্রতি তিন মিনিটে এক পৃষ্ঠা, ইংরেজিতে গড়ে প্রতি পাঁচ মিনিটে এক পৃষ্ঠা—এই নীতি অনুসরণ করতে পারেন।
১২. যে ভাষায় আপনি অতি দ্রুত লিখতে পারেন, সেই ভাষাতে উত্তর করবেন। আমি উত্তর করেছিলাম বাংলায়।
১৩. প্রতিদিনই প্রার্থনা করুন, সবার সঙ্গে বিনীত আচরণ করুন। এটা আপনাকে ভালো প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে।
১৪. যেগুলো কিছুতেই মনে থাকে না, সেগুলো মনে রাখার অতি চেষ্টা বাদ দিন। অন্য কেউ ওটা পারে মানেই আপনাকেও পারতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। আপনি যা পারেন, তা যেন ভালোভাবে পারেন, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
১৫. সবকিছু পড়ার সহজাত লোভ সামলান। বেশি পড়া নয়, প্রয়োজনীয় টপিক বেশি পড়াই বড় কথা।
১৬. কারও পড়ার স্টাইল অন্ধভাবে ফলো করবেন না। ফলাফলই বলে দেবে, কে ঠিক ছিল, কে ভুল। ফল বের হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আপনি কারও চেয়ে কোনো অংশে কম নন।
১৭. অন্তত তিন-চারটি গাইডবই থেকে উত্তর পড়ুন। পড়ার সময় গোলমেলে আর দরকারি অংশগুলো দাগিয়ে রাখুন, যাতে রিভিশন দেওয়ার সময় শুধু দাগানো অংশগুলো পড়লেই চলে।
১৮. দিনের বিভিন্ন সময়ে ব্রেক নিয়ে ১০-১৫ মিনিট করে অল্প সময়ের জন্য ঘুমিয়ে নিলে দুটো লাভ হয়। এক. রাতে কম ঘুমালে চলে। দুই. যতক্ষণ জেগে আছেন, সে সময়টার সর্বোত্তম ব্যবহারটুকু করতে পারবেন। ও রকম অল্প সময়ের কার্যকর ঘুমকে ‘পাওয়ার ন্যাপ’ বলে।
১৯. অনলাইনে চার-পাঁচটি পেপার পড়ার সময় শুধু ওইটুকুই পড়ুন, যতটুকু বিসিএস পরীক্ষার জন্য কাজে লাগে।
২০. বিসিএস পরীক্ষা হলো লিখিত পরীক্ষার খেলা। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, মানসিক দক্ষতা আর বিজ্ঞানে বেশি নম্বর তোলা মানেই অন্যদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে যাওয়া। এই সময়ে বিসিএস পরীক্ষায় দুর্নীতি, ভাইভাতে স্বজনপ্রিয়তা, সিভিল সার্ভিসের নানান নেতিবাচক দিকসহ দুনিয়ার যাবতীয় ফালতু বিষয় নিয়ে শোনা, ভাবা, গবেষণা করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
এ কয় দিনে আপনার প্রচণ্ড মানসিক ও শারীরিক কষ্টের মধ্য দিয়ে যাওয়ার কথা। ও রকমই হলে, আমি বলব, আপনি ঠিক পথে আছেন। আমার অভিজ্ঞতা বলে, পরীক্ষার আগের সময়টাতে যে যত বেশি আরামে থাকে, পরীক্ষার ফল বের হওয়ার পরের সময়টাতে সে ততোধিক কষ্টে থাকে। বেশি পরিশ্রমে কেউ মরে না। যদি তা-ই হতো, তবে আমরা দেখতে পেতাম, পৃথিবীর সব সফল মানুষই মৃত।
-সুশান্ত পাল
সম্মিলিত মেধায় ১ম ,৩০তম বিসিএস।