সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরির প্রস্তুতি


মোঃ হামিদ পারভেজ
সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি)
দৌলতখান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ভোলা।

আসসালামু আলাইকুম, আশা করি আপনারা ভাল আছেন। কিছুদিন পরেই শুরু হবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। এবার এত বেশি প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নিবে যে একসাথে সবার পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না। তাই অঞ্চলভিত্তিক আলাদাভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে।

আপনারা জানেন বর্তমানে দেশের শিক্ষিত বেকারদের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একটি চাকরি। কারন একটি চাকরির সাথে জড়িয়ে আছে আপনার জীবনের অনেককিছু। আপনাদের মধ্যে যারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিবেন তারা কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন আজ তা নিয়ে লিখছি।

এই পরীক্ষার মোট নম্বর ১০০, এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষার নম্বর ৮০ আর মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ২০। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আপনাকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। লিখিত পরীক্ষা নেয়া হবে এমসিকিউ পদ্ধতিতে। বিষয় গুলো হচ্ছে বাংলা, গণিত, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান। প্রতিটি বিষয় থেকে ২০টি করে মোট ৮০ টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। অর্থাৎ চারটি উত্তর ভুল হলেই প্রাপ্ত নম্বর থেকে ১ নম্বর কাটা যাবে।

আপনাকে প্রতিটি বিষয়ের জন্যই আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। আপনি যদি ৮০ এর মধ্যে ৭০+ নম্বর পান তাহলে আপনি সেইফ জোনে থাকবেন। তাই প্রস্তুতি নিতে হবে ভালভাবে। কোন অবহেলা করা যাবেনা। কারন আপনাকে কয়েক লক্ষ প্রার্থীর সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে আর একটি চাকরির সাথে আপনার জীবন ও ভবিষ্যৎ জড়িত।

কি কি পড়বেন ও কিভাবে পড়বেন-
বাংলাঃ

প্রথমেই আসি বাংলা নিয়ে। বাংলা অংশে ব্যাকরণের ওপর বেশি জোর দিতে হবে। অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড প্রণীত ব্যাকরণ বইয়ের সব অধ্যায় উদাহরণসহ ভালোভাবে পড়তে হবে। জানতে হবে কবি-সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম ও জীবনী সম্পর্কে। এসএসসি বোর্ড বইয়ের লেখক পরিচিতি বা সাহিত্যিক পরিচিতি অংশ পড়লে অনেকটা সহায়ক হবে। ব্যাকরণ থেকে ভাষা, বর্ণ, শব্দ, সন্ধি বিচ্ছেদ, কারক, বিভক্তি, উপসর্গ, অনুসর্গ, ধাতু, সমাস, বানান শুদ্ধি, পারিভাষিক শব্দ, সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, বাগধারা, এককথায় প্রকাশ থেকে প্রশ্ন আসে। সাহিত্য অংশে গল্প বা উপন্যাসের রচয়িতা, কবিতার লাইন উল্লেখ করে কবির নাম থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। এই সব গুলো বিষয় যে কোন গাইডে গুছিয়ে দেওয়া আছে। সেখান থেকে পড়তে পারেন।

ইংরেজিঃ
ইংরেজি গ্রামারের Right forms of verb, Tense, Preposition, Parts of Speech, Voice, Narration, Spelling, Sentence Correction- থেকে প্রশ্ন আসে। Advance Learners by Chowdhury and Hossain বা অন্য যে কোন গ্রামার বই থেকে গ্রামারের এই টপিকস গুলো উদাহরণসহ পড়ুন। মুখস্থ করতে হবে Phrase and Idoims, Synonym, Antonym। ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদও পড়তে হবে। এজন্য ২০১৫-১৮ সালের বিভিন্ন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করতে পারেন।

গণিত :
এই অংশে মার্কস পাওয়া তুলনামূলক ভাবে সহজ। প্রতিদিন ২-৩ ঘণ্টা গণিত প্রাকটিস করা দরকার। পাটিগণিতের পরিমাপ ও একক, ঐকিক নিয়ম, অনুপাত, শতকরা, সুদকষা, লাভক্ষতি, ভগ্নাংশ থেকে প্রশ্ন আসে। বীজগণিতের সাধারণ সূত্রাবলী থেকে প্রশ্ন থাকে। মুখে মুখে ও সূত্র প্রয়োগ করে সংক্ষেপে ফল বের করার প্র্যাকটিস করতে হবে। যাতে প্রশ্ন দেখামাত্রই সূত্র প্রয়োগ করে ফল বের করা যায়। জ্যামিতির জন্য ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বর্গক্ষেত্র, রম্বস, বৃত্ত ইত্যাদির সাধারণ সূত্র ও সূত্রের প্রয়োগ প্রাকটিস করবেন। মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্যবই যেমন অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির গণিত বই অনুসরণ করলে ভালো হবে। এছাড়া যে কোন গাইড বইয়ের গণিত অংশটুকু ভাল ভাবে করলেই হবে।

সাধারণ জ্ঞানঃ
বাংলাদেশ বিষয়াবলী থেকে প্রশ্ন বেশি আসে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিক্ষা, ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ, ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু, সভ্যতা ও সংস্কৃতি, বিখ্যাত স্থান, বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা, অর্থনীতি, বিভিন্ন সম্পদ, জাতীয় দিবস থেকে প্রশ্ন আসতে পারে।

আর আন্তর্জাতিক অংশে বিভিন্ন সংস্থা, দেশ, মুদ্রা, রাজধানী, দিবস, পুরস্কার ও সম্মাননা, খেলাধুলা থেকে প্রশ্ন থাকে।
আর সাম্প্রতিক বিষয়ের জন্য মাসিক কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স পড়তে পারেন।

সাধারণ বিজ্ঞান থেকে বিভিন্ন রোগব্যাধি, খাদ্যগুণ, পুষ্টি, ভিটামিন থেকে প্রশ্ন আসতে পারে।

কম্পিউটার ও আইসিটি থেকেও প্রশ্ন থাকে। আপনি কম্পিউটার ও আইসিটির বেসিক বিষয় গুলো ভালভাবে আয়ত্ব করবেন।

বিজ্ঞান, আইসিটি ও কম্পিউটার এর জন্য ২০১৫-১৮ সালের বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন গুলো ভালভাবে পড়লে বেশ কিছু কমন পেতে পারেন।

এইভাবে পড়লে আশা করি আপনি প্রিলিতে ভাল নম্বর পাবেন। তবে আপনি চাইলে যিনি আরো ভাল জানেন বা নিজের পরামর্শ অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে পারেন। তবে যেভাবেই নেন না কেন আপনাকে পড়তে হবে পরিশ্রম করতে হবে। ৩০ বছর যে চাকরি করে আপনার জীবন চলবে সেই চাকরির জন্য অন্তত দৈনিক ১০ ঘণ্টা করে পড়ালেখা করুন।

পড়ুন, পরিশ্রম করুন, প্রার্থনা করুন এবং পড়ুন। আপনি যদি ভালভাবে পড়েন সেটা কোন না কোন জবে ঠিকই কাজে লাগবে। পড়ালেখা কখনো বৃথা যায় না। কোন না কোন ভাবে এর সুফল আপনি পাবেনই। ভাল প্রস্তুতির মাধ্যমেই ভাল পরীক্ষা দেওয়া যায়। আর পরীক্ষা ভাল হলে জব হওয়াটা সহজ। যারা নেগেটিভ কথা বলবে তাদের থেকে দূরে থাকুন। ভাল থাকবেন। আল্লাহ সবার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিন।

মোঃ হামিদ পারভেজ
সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি)
দৌলতখান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ভোলা।

নিজের সুবিধামত পড়ার জন্য টাইমলাইনে শেয়ার করে রাখুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen + twenty =