বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা প্রস্তুতিঃ বাংলা

অভিজিৎ বসাক
বিসিএস ( প্রশাসন)
৩৩তম বিসিএস

বিসিএস পরীক্ষার প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। কিন্তু আপনি যদি একটু টেকনিক অবলম্বন করে, সঠিক পরিকল্পনা করে পড়াশুনা করেন, তাহলে খুব অল্প সময়েই ভাল মার্ক পাওয়া সম্ভব।

বাংলা সাহিত্য: বাংলা থেকে সাধারণত দুই ধরনের প্রশ্ন করা হয়। ১. বাংলা ভাষা ও ব্যাকরণ ২. বাংলা সাহিত্য । বিগত কয়েক বছরের প্রশ্নগুলো খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন যে- ভাষা ও ব্যাকরণের থেকে সাহিত্য অংশ থেকেই বেশি প্রশ্ন দেওয়া হচ্ছে। তাই সাহিত্য অংশের জন্য বেশি সময় রাখতে হবে।

সাহিত্য অংশে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন হয়- গ্রন্থের নাম ও সেসব গ্রন্থের চরিত্র, মধ্যযুগের সাহিত্য, বিভিন্ন কবি ও সাহিত্যিকের উক্তি ও উদ্ধৃতি, রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য, বিভিন্ন বাংলা পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের নাম, বিভিন্ন রচনার ধরণ(কোনটি কবিতা, কোনটি উপন্যাস ইত্যাদি), রবীন্দ্র-পূর্ববর্তী সাহিত্য, বাংলাদেশের সাহিত্য, নাটকের উৎপত্তি ও বিকাশ, মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ সাহিত্য ইত্যাদি থেকে। এই অংশগুলো থেকে প্রচুর প্রশ্ন থাকলেও আমাদের আরও কিছু বিষয় থেকে মাঝে মাঝেই প্রশ্ন আসে। যেমন- বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ, আধুনিক যুগ, বাংলা গদ্যের বিকাশ, প্রবন্ধের উৎপত্তি, ছন্দ প্রকরণ, বাংলা গান, বাংলা অভিধান ইত্যাদি। তবে পড়া শুরু করার আগে অবশ্যই বিগত বছরের প্রশ্নগুলো একবার করে দেখে নেবেন। আর যদি সেগুলো বুঝে বুঝে সমাধান করতে পারেন তাহলে আরও ভাল হয়।

কোন বই থেকে পড়বেন ? বাংলা সাহিত্যের জন্য ভাল প্রস্তুতি নিতে ড. হুমায়ুন আজাদের লেখা- “ লাল নীল দীপাবলি” বইটিকে ভালমতো পড়তে পারেন। এই বইটিতে লেখক বাংলা সাহিত্যের শুরু, ক্রমবিকাশ ও পরিণতি সম্পর্কে একদম বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বইটিতে বিভিন্ন লেখকের উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন সাহিত্যের রচনার সময়ও উল্লেখ করা আছে। বাংলা সাহিত্যের প্রচুর তথ্য খুব গুছিয়ে দেয়া আছে। এছাড়াও স্কুল এবং কলেজে আমরা যে বাংলা পাঠ্যপুস্তকগুলো পরেছি সেগুলো একটু করে দেখে নিতে হবে। তবে অষ্টম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা বইগুলোকে খুব ভালমতো পড়ে নিতে হবে। বিশেষ করে কবি ও লেখক পরিচিতি অংশটুকু খুব ভালমতো পড়তে হবে। লেখক পরিচিতিটুকু পাঠ্য বই থেকে পড়লে সহজেই বুঝতে পারবেন। তাই পাঠ্যপুস্তক আবশ্যিক। এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের গাইড বই, জব সল্যুশন, ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা(লেখক-সৌমিত্র শেখর), কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ইত্যাদি ছাড়াও বিভিন্ন কবি ও সাহিত্যিকের জন্মজয়ন্তী ইত্যাদি সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন ম্যাগাজিন থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো পড়তে পারেন।

কিভাবে পড়বেন? বাংলা সাহিত্য আসলে বিশাল এক অধ্যায়। এই বিশাল সাহিত্য ভাণ্ডারের সব তথ্য মনে রাখা আসলে প্রায় অসম্ভব। তাই আপনাকে বুঝতে হবে কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর কোনটি অপেক্ষাকৃত কম। যেমন- আপনারা খেয়াল করলেই দেখবেন শুধুমাত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপরই প্রতি বছর বেশ কয়েকটি প্রশ্ন থাকে। সুতরাং রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে খুব ভালমতো পড়ে ফেলতে হবে, যেন এক নম্বরও বাদ না পড়ে। অর্থাৎ আপনি ইচ্ছেমত বা ভাল লাগার উপর সময় না দিয়ে বেছে বেছে কোন অংশ থেকে বেশি প্রশ্ন হয় সেই অংশগুলো একদম ভালমতো পড়তে হবে। প্রচুর কবি ও সাহিত্যিকের সাহিত্যকর্ম মনে রাখতে গিয়ে অনেকেই অসুবিধায় পরেন। আসলে এ নিয়ে ভয় পাবার কিছুই নেই। যে জিনিসগুলো আপনার ভাল লাগে না কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোকে বার বার পড়তে থাকুন। দেখবেন এমনিতেই মনে থাকা শুরু করেছে। আমাদের মস্তিষ্কের কাজই হলো- পরিচিত কিছুকে মনে রাখা। আপনার অপরিচিত বলেই ঐ বিষয়টা মনে থাকছে না। কিন্তু যখন বার বার পড়বেন তখন ঠিকই মস্তিষ্কের কাছে সেটা পরিচিত হয়ে যাবে।

সাহিত্য আসলে আমাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে। আমাদের জীবনের বিভিন্ন উপাদান, দুঃখ, হাসি, বেদনা ইত্যাদির গল্প নিয়েই সাহিত্যিকরা তাদের উপন্যাস/গল্প/কবিতা সৃষ্টি করেন। বিভিন্ন বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে যদি আগে থেকেই কিছুটা ধারণা থাকে তাহলে সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় পড়ে মজা পাওয়া যায়। আর এই মজা পাওয়াটাই কিন্তু খুব কাজে আসে। আপনি যদি কোন কিছুতে মজা না পান, তাহলে নিশ্চিত থাকতে পারেন যে- সেখানে আপনার মনোযোগ থাকবে না। আর মনোযোগ না থাকলে কোনকিছুতেই আপনি ভাল করতে পারবেন না। তাই কিছু বিখ্যাত সাহিত্য বিষয়ে ধারণা নিয়ে নিন দেখবেন সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের জীবন ও কর্ম নিয়ে তথ্য মনে রাখতে আর বিরক্তি লাগছে না। মধ্যযুগের সাহিত্য থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। মধ্যযুগে মূলত বিভিন্ন দেব-দেবী ও ধর্মীয় বিষয় নিয়েই সাহিত্য রচিত হয়েছে। সহজে মনে রাখার জন্য বিভিন্ন মঙ্গল কাব্য, এগুলোর লেখক সময় ইত্যাদি নিয়ে একটি ছকের মত তৈরি করে ফেলতে পারেন। যেন এই ছক দেখলেই মধ্যযুগের সাহিত্য সম্পর্কে সবকিছু একবার ঝালাই করে নিতে পারেন। বিভিন্ন মঙ্গলকাব্য ও একই রকম নামের লেখকদের নিয়ে অনেক সময়ই প্যাচ লেগে যায়। কিন্তু আপনি যদি একটি ছকের মধ্যে তাদের জায়গা দিতে পারেন তাহলে এদের মধ্যে পার্থক্যগুলো আপনার কাছে খুব ভালমতো পরিচিত হয়ে যাবে।

মনে রাখার একটি সহজ উপায় হলো- কোন কিছুর সাথে তুলনা দিয়ে বা কোন একটি ছড়ার মত করে মিলিয়ে মনে রাখা। যদিও এই পদ্ধতিটি অনেকেই পছন্দ করেন না, তবে প্রথমদিকে মস্তিষ্ককে পরিচিত করানোর জন্য এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন। এতে আপনার সময় কম লাগবে। এভাবে বিভিন্ন ধরণের কৌশল কাজে লাগিয়ে আপনাকে কম সময়ের মধ্যে বেশি তথ্য মনে রাখতে হবে। এজন্য কখনো হয়ত ছক তৈরি করা লাগতে পারে, আবার কখনো হয়ত বিখ্যাত একটি সাহিত্যকর্ম পড়েও দেখা লাগতে পারে।

লক্ষ্য স্থির করে পড়াশুনা চালিয়ে যান। সফলতা আসবেই। আজ এ পর্যন্তই থাক। সবাই ভাল থাকবেন।

লেখা বিষয়ে কোন পরামর্শ থাকলে আমার ইনবক্সে যোগাযোগ করতে পারেন। ফেইসবুক আইডিঃ Avizit Basak

“Don’t spend time beating on a wall, hoping to transform it into a door. ” ― Coco Chane


বি দ্রঃ লেখাটাতে শুধু আমার নিজের আইডিয়া অনুযায়ী ধারণা দেয়া হয়েছে। আপনি আপনার মত করেও প্রস্তুতি নিতে পারেন। সফল হবার জন্য যে প্রস্তুতি দরকার, সেটা সম্পন্ন করাটাই মুখ্য কাজ।আর ছোটখাটো বা অনিচ্ছাকৃত কোনও ভুল থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন দয়া করে।

নিজের সুবিধামত পড়ার জন্য টাইমলাইনে শেয়ার করে রাখুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 + 16 =