বিসিএস ক্যাডার হবার মন্ত্র

কিছু শিক্ষণীয় উদাহরণ যা আপনাকে জাগ্রত করবে:

ক্যাডার হতে চাচ্ছেন?? কিন্তু নিজের সাধ এবং সাধ্যের সাথে একবার ফারাকটা মিলিয়ে দেখেছেন। জানেন সফল হয়েছেন যারা, তারা কি করেছেন??? আর আপনি কি করছেন!!! সুতরাং তাদের আত্মত্যাগের সাথে নিজের জীবনের গল্পকে মিলিয়ে নিন; আপনার ভবিষ্যতের অবস্থান জেনে যাবেন। ভবিষ্যতে সচিবালয়ের আমলা হবেন; না সুমাইয়ার বাড়ির কামলা হবেন। নিজেই স্বচক্ষে দেখতে পাবেন।

বিসিএস ক্যাডার হবার মন্ত্র

# প্রায় ১২ বছর ধরে এক টুকরা রুটি এবং এক চুমুক পানি পান করে; হেরা পর্বতের গুহাতে ধ্যান করার পুরস্কার স্বরুপ কুরআন পেয়েছিলেন মুহাম্মদ সা.!! আপনি কত বছর ধরে একটানা বিসিএস এর প্রিপারেশন নিচ্ছেন? না ১-২ বছরেই হাল ছেড়ে দিলেন?

# বুদ্ধত্ব বা জ্ঞান লাভের জন্য নিরঞ্জনা নদীতে গোসল করে; বোধিবৃক্ষের নিচে একটানা খাদ্য পানীয় ছাড়া ৬ বছর ধ্যান করার মাধ্যমে, ত্রিপিটক নামক জ্ঞানগ্রন্থ পেয়েছিলেন গৌতম_বুদ্ধ। আপনি কয় ঘন্টা একটানা পড়াশুনা করেছেন????

# টোরা নামক গ্রন্থ পেতে মোজেস (মুসা আ.) পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া তুর পর্বতে, একটানা ৪০ দিন জ্বলন্ত কয়লার ওপর পড়ে থেকে; নবুওয়াতের জন্য নিজের ধৈর্য্যের প্রমাণ দিয়ে ছিলেন? আর আপনি বলেন বই ধরলেই ঘুম আসে!!!

Gain করতে চান; কিন্তু Pain সহ্য করতে চান না!! মনে রাখবেন যত বেশি Pain; তত বড় Pain. No pain no gain.

# বাইবেল নামক ধর্মগ্রন্থ পেতে, জিসাস_ক্রাইস্ট ৪০ দিন একটানা প্যালেস্টাইনের তপ্ত মরুভূমিতে উপুড় হয়ে পড়ে থেকে, নিজের সংযমের পরিচয় দিয়েছিলেন !! আপনি কত ঘন্টা একটানা ক্লাস বা লাইব্রেরিতে বসে থাকেন?

মনে রাখবেন আপনার মত লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী প্রস্তুতি নিচ্ছে। সুতরাং পরিশ্রমে তাদেকে অতিক্রম করতে না পারলের আপনি সফল হবেন না।

# একমাত্র আত্মত্যাগই পারে আপনাকে সফলতার শীর্ষে পৌছাতে। রাবণ পুত্র মেঘনাদ যজ্ঞের মাধ্যমে শক্তি অর্জন করে, দেবতাদের রাজা ইন্দ্রকে পরাজিত করার মাধ্যমে ইন্দ্রজিত উপাধী ধারণ করেছিলেন। কিন্তু অঙ্গদ ও হনুমান মিলে যখন তার ধ্যান ভঙ্গ করে, তখন সেই মেঘনাদ’ই পরাজিত হয় ডেমি-গড রামের নিকট। সুতরাং যত ধ্যাণ তত জ্ঞান। তিলোত্তমা দিয়ে সুন্দ এবং অসুন্দের ধ্যাণ ভঙ্গ করেই ইন্দ্র স্বর্গরাজ্যকে রক্ষা করেছিলেন। আর ধ্বংস হয়েছিল সুন্দ-অসুন্দ ভ্রাতার অধীনস্ত অসুর ও তাদের স্বপ্ন। সুতরাং আপনার একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান হওয়া উচিৎ বিসিএস। আর এর জন্য যদি সকল তিলোত্তমার সুন্দর মুখকে উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে না পারেন; তবে আপনিও নিশ্চিত আমার মত ফাঁদে পড়বেন।

# শচীন টেন্ডুলকারকে তাঁর বিশ্ববিদ্যালেয়ের প্রফেসর বাবা ও বিখ্যাত মারাঠি কবি রমেশ টেন্ডুলকার বলেছিলেন; শচীনকে ক্রিকেট অথবা পড়াশুনা দুটির মধ্যে একটি বেছে নিতে হবে। টেন্ডুলকার শুধু বেছে নিয়েছিলেন ক্রিকেটকে। সারা জীবন শুধু ক্রিকেট খেলেই তিনি আজ গড অব ক্রিকেট। তাই আপনি বেছে নেন যে কোন একটি। আর তাতেই হাঙরের মত তীব্র গতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ুন।

# ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্রের সর্ব্বোচ পুরস্কার পাওয়া নায়ক-প্রযোজক-পর িচালক আমির খান তার একটি সিনেমা ‘দাঙ্গাল’ এর জন্য ২৩ কেজি ওজন বাড়িয়েছিলেন!!! আবার ৫ মিনিটের একটি রোলের জন্য ২৭ কেজি ওজন কমিয়েছিলেন মাত্র ৩ মাসে। কি দরকার আমির খানের?? কি চাই?? তার দাদা কংগ্রেসের ৩ বারের সভাপতি ও ভারতে শেষ নিযাম ‘ইন্ডিয়া উইন্স ফ্রিডম’ গ্রন্থের লেখক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। তার বাবা তাহির হোসেন খান বলিউডের শ্রেষ্ঠ নির্মাতা। তার চাচা নাসির খান ভারতে অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রযোজক। কিন্তু মাল্টি বিলিয়নার আমির ৫১ বছর বয়সে এসে ৫ মিনিটের রোল পারফেক্ট করতে ২৭ কেজি ওজন কমায়। আর আপনার সারা জীবন, যে ক্যারিয়ারের ওপর নির্ভর করছে; তার জন্য আপনি কি পরিশ্রম করছেন একবার ভাবুন!!! গা ঝাড়া দিয়ে ওঠেন। বলে উঠুন উপরের সকলেই মানুষ; আমার মতই মানুষ। তারা পারলে আমিও পারব। ঝরে পড়ার জন্য আমার জন্ম হয়নি।

বিগ ব্যাং এর মত প্রচন্ড নিনাদের সাথে জেগে উঠে, নিজেকে প্রমাণ করার জন্যই আমার সৃষ্টি। লড়াই করুন সেই মায়ের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য; যিনি নিজের ওষুধের পয়সা বাঁচিয়ে দিনরাত শ্বাসকষ্ঠ-কাশিতে ভুগছে। অথচ আপনার টাকা ঠিকই পাঠাচ্ছে। না জানি কত রোগকে গোপন রেখে অসহ্য যন্ত্রনা সহ্য করে যাচ্ছে; শুধু একটি স্বপ্নের জন্য। মানুষ তাকে বলবে অমুক ক্যাডারের মা; অমুক অফিসারের মা। লড়াই করুন সেই বাবার জন্য; যিনি আপনাকে পাঠানোর জন্য দুটি টাকা বাঁচাতে, ৩ কিলোমিটার হেঁটে বাজারের ব্যাগ বহন করে আনে। আপনার চাহিদা টাকা পাঠাতে যিনি একের পর এক জমি গোপনে বন্ধকে রেখেছে এই আশাতে; আপনি ক্যাডার হয়ে যেগুলোকে মুক্ত করবেন। লোকে বলবে উনি ক্যাডারের বাবা। কিন্তু আপনার একটু ব্যর্থতাই এই বৃদ্ধ মানুষগুলোর ৩০ বছরের লালিত স্বপ্নকে হত্যা করবে। তারা শুধু আর একটি স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য পথ চেয়ে আছেন; সেটি আপনার সফলতা। আর আপনি ব্যর্থ হলে তাঁরা মৃত্য ছাড়া আর কিছুই কামনা করবেনা।

সুতরাং এই লড়াই আপনাকে লড়তে হবে ‘সংসপ্তক’ এর মত। হয় মন্ত্রের সাধন নয়ত শরীর পাতন। চিন্তা করুন সেই সখিনার কথা; যে শত ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারের বিয়ের প্রস্তাবকে উপেক্ষা করে, আপনার পথ চেয়ে ক্রমশ বুড়ি হয়ে যাচ্ছে। শেষে এসে তাকে কি জবাব দিবেন? মিঞা আপনার সফলতার জন্য আপনার বাবা-মা, আপনার সখিনা, আপনার কুতুব, আপনার আত্মীয়-স্বজন সকলেই প্রাণান্তকর আত্মত্যাগ করে চলেছে……।

শুধু গরুর মত সময়গুলোকে নষ্ট করছেন আপনি। সুতরাং সূর্যের মত জ্বলে উঠুন; জ্বালিয়ে পুড়িয়ে সব ছারখার করে দিন। যা আপনার ক্যাডার হবার পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে। জ্বলে উঠুন নিজের ভিতরের সুপ্ত আগ্নেগিরির উদগিরণের মাধ্যমে। বিশ্বকে বলুন….. মঞ্চ তৈরি করে রাখ; আমি আসছি

লিখেছেনঃ মাহানুর ইসলাম
সাবেক মানবসম্পদ কর্মকর্তা, ব্র্যাক।

নিজের সুবিধামত পড়ার জন্য টাইমলাইনে শেয়ার করে রাখুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 3 =