১৯০৭ সালে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজ দরবারের গ্রন্থাগার থেকে যেমন চর্যাপদ আবিষ্কার করেছিলো, তেমনি আমি তোমাকে আবিষ্কার করেছি আমার গহীন মন থেকে।
১৯১৬ সালে যেমন শাস্ত্রী মশায় কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে তা প্রকাশ করেছিল, ঠিক আমিও আমার মনের অব্যক্ত কথাগুলো প্রকাশ করেছি।
হয়তো আমি মুনীদত্তের মতো ব্যাখ্যা করতে পারিনি তবে তুমি চাইলেই এই আলো আধারী ভাষা বুঝতে পারতে।
তোমার আমার সম্পর্কটা ঠিক শহীদুল্লাহর ও সুনীতিকুমারের চর্যাপদ রচনাকালের সময় নিয়ে দ্বন্ধের মতো আমি (শ) বলি ৬৫০ আর তুমি(সু) বলো ৯৫০-১২০০।
আমি আদিকবি লুইপার মতো আদি প্রেমিক হতে চেয়েছিলাম, সর্বাধিক পদকর্তা কাহ্নপার মতো দিতে চেয়েছিলাম সর্বাধিক ভালবাসা যদিও বাংগালি কবি ভুসুকুপার মতো আমি আমার পরিচয় কাউকে দিইনি।
১২০১-১৩৫০ সালে বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগের মতো আজ আমার মনে এক ভয়ানক অন্ধকার গ্রাস করেছে। এজন্য অন্ধকার যুগের জন্য দায়ী বখতিয়ার খিলজীর মতো আমি তোমাকে দায়ী করবো না।
একদিন হয়তো বড়ু চন্ডীদাসের মতো আমিও শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের রচনা করবো, আর দুজন মিলে রাধাকৃষ্ণের মতো প্রেমের দ্যুতি ছড়াবো।
বড়ু চন্ডীদাস ছাড়াও বাংলা সাহিত্যে দ্বিজ চন্ডীদাস নামে একজন কবি আছে যার একটি কবিতা পড়লেই তোমার কথা মনে পড়ে-
“বহুদিন পর বঁধুয়া এলে
দেখা না হইত পড়াণ গেলে.
এতেক সহিত অবলা বলে.
ফাটিয়া যাইত পাষাণ হলে.
দুখিনীর দিন দুখেতে গেল.
মথুরা নগরে ছিলে ত ভাল.
এই সুখ দুখ কিছু না গণি..
তোমার কুশলে কুশল মানি..”
হ্যাঁ আমি তোমারি কুশলে কুশল মানি
আচ্ছা তুমি তো জানো আমি সাপ ভয় পাই, মনসামঙ্গলের লক্ষীন্দরের মতো আমাকেও যদি কখনো সাপে কাটে বেহুলার মতো আমার পাশে থাকবে কি?
নাকি চন্ডীমঙ্গলের ফুল্লরার মতো আমাকে ভুলবুঝে দূরে সরে যাবে? যে কিনা ভুল বুঝেছিল তার স্বামী কালকেতুকে।
সংসার নিয়ে আমি তোমার মতো গাড়িবাড়ি আর অট্টালিকার স্বপ্ন দেখিনা শুধু অন্নদামঙ্গলের রচয়িতা ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের মতোই বলবো
“আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে”
আচ্ছা আমি যদি কনফেশন গুলো মিথিলার রাজসভার কবি বিদ্যাপতির মতো ব্রজবুলি ভাষায় লিখতাম?
“আজু রজনী হম ভাগে গমাওল
পেখল পিয়া মুখ চন্দা”
তাহলে তুমি কি আমার মনের ভাষা বুঝতে পারতে?
আচ্ছা বাংলায় বলি
“অনেক ভাগ্যে আজ আমার রাত পোহালো, দেখলাম প্রিয়মুখ”
আচ্ছা প্রিয় তোমার মুখ দেখার সৌভাগ্য আমার কখন হবে?
চৈতন্যদেব বাংলা সাহিত্যে এক অক্ষর না লিখেও ইতিহাসে অধিকার করে আছেন বড় স্থান, সেরকম তুমিও আমাকে একটু ভাল না বাসলেও আমার অন্তরে বড় স্থান দখল করে থাকবে।
তুমি তো জাতপাতে বিশ্বাসী,
পড়েছ কি বাল্মীকির রামায়ণ?
যার প্রথম ও শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কৃত্তিবাস ওঝা।
পড়েছ কি ব্যাসদেব এর মহাভারত?
যার প্রথম অনুবাদক কবীন্দ্র পরমেশ্বর আর শ্রেষ্ঠ অনুবাদক ছিলেন কাশীরাম দাস।
পড়ে দেখিও এইখানে বৈষম্য নেই কোন জাতপাতের।
কৃত্তিবাস এর একটি কবিতা শুনাই
“সংসার মাঝে কয়েকটি সুর.
রেখে দিয়ে যাব করিয়া মধুর.
দুএকটি কাটা করে দিব দূর.
তার পরে ছুটি নিবো..”
কেন জানি মনে হয় না পাওয়ার কস্টে শীঘ্রই ছুটি হবে আমার।
আর তোমার আমার কাহিনী নিয়ে বাংলা ভাষার প্রথম মুসলমান কবি শাহ মুহাম্মদ সগীরের ইউসুফ-জোলেখা কাব্যের মতোই কেউ কাব্য রচনা করবে।
অথবা আমাদের প্রণয় নিয়ে বাহরাম খানের লাইলি-মজনুর মতোই রচিত হবে কোন এক প্রণয়োপাখ্যান।
আচ্ছা মনে কি পড়ে মধ্যযুগের কবি আব্দুল হাকিমের কবিতা?
কনফেশন দেখে রাগ করবে কি তুমি?
রাগ করোনা রূপবতী, একদিন মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ মুসলমান কবি আলাওলের মতই তোমাকে নিয়ে রচিব “পদ্মাবতী”।
চন্দ্রকুমার দে যেমন বাংলা সাহিত্যের লোক সাহিত্য গুলো সংগ্রহে রেখেছিল, তেমনি আমার লেখা কনফেশন গুলো সংগ্রহে রেখো(আরও লিখার ইচ্ছা আছে, যদি তুমি রাগ না করো) ,দীনেশচন্দ্র সেন এর মতো সম্পাদনার কাজটা নাহয় আমিই করবো।
আমি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো আমাদের কথাগুলো নিয়ে লিখবো “কথামালা”।
তবে তার মতো “সীতার বনবাস” রচনা করতে চাইনা।
আমি বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস প্যারীচাদ মিত্রের “আলালের ঘরের দুলাল” নই তবে তুমি আমার দুর্গেশনন্দিনী (প্রথম সার্থক উপন্যাস)।
আমি মদুসূদন দত্তের মহাকাব্যের মতোই তোমার জন্য করব “মেঘনাদবধ”, আজ জেনে রেখো হে তিলোত্তমাসম্ভবা।
আমি বিহারীলাল চক্রবর্তীর মতোই হবো ভোরের পাখি আর লিখবো “বঙ্গসুন্দরী” কাব্য।
মেয়ে আমার বউ হবে?
বঙ্কিমচন্দ্রের মতো ইংরেজিতে লিখবো তোমায় নিয়ে “রাজমোহনস ওয়াইফ”।
আমি কিন্তু জাদরেল জামাই হবোনা, হবো তারাচরণ শিকদারের লেখা বাংলা সাহিত্যের প্রথম মৌলিক নাটক “ভদ্রার্জুন” এর মতো।
রবীঠাকুরের প্রথম প্রকাশিত কাব্যের মতোই তোমাকে দিবো “হিন্দু মেলার উপহার” আর তোমাকে ভূতের ভয় দেখিয়ে তার মতোই প্রবন্ধ লিখবো “পঞ্চভূত”।
আমি নজরুলের মতো “বিদ্রোহী” হবো আর তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো “ছায়ানট”।
বসে থাকবো জসীমউদ্দীনের “নকশি কাথার মাঠ” এ।
আমাদের বাচ্চা হবে বাংলা সাহিত্যের পঞ্চপাণ্ডব যাদের নাম রাখবো “বুদ্ধদেব,জীবনানন্দ,সুধীন্দ্র,অমমিয় আর বিষ্ণু”।
হয়তো আমি সুকুমার রায়ের মতো “আবোল তাবোল” লিখছি তাই বলে ভেবোনা আমি শরৎচন্দ্রের মতো “চরিত্রহীন”।
জীবনান্দের বনলতা সেন কবিতাটি পড়েছ?
শুনো বালিকা
“আমি ক্লান্ত প্রাণ এক চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন”
জীবনানন্দের “আকাশলীনা” কবিতার মতোই বলতে চাই
“সুরঞ্জনা, ওইখানে যেওনাকো তুমি,বোলোনাকো কথা ওই যুবকের সাথে”।
হয়তো জীবনানন্দের মতো রাস্তায় ট্রাম চাপা পড়ে আমারো একদিন মৃত্যু হবে আর রচিত হবে আরেকটি ছোটগল্প।
কিন্তু তার আগেই ব্লক মেরে দিবেনা তো?
রবি ঠাকুরের মতই বলতে হচ্ছে
“অন্তরে অতৃপ্তি রবে
সাঙ্গ করি মনে হবে
শেষ হয়ে হইল না শেষ”
( লেখকের নাম জানতে পারিনি – অল ক্রেডিট টু দ্যা রাইটার)
Wow! Excellent 👌 cordial thanks to the writter