আবু সাঈদ সাহেবের ভাইভা অভিজ্ঞতা

৩৮ তম বিসিএস ভাইভা অভিজ্ঞতাঃ
[ টেকনিক্যাল ক্যাডার, কৃষি ]
প্রার্থী : আবু সাঈদ
বোর্ডঃ শ্রদ্ধেয় আবদুল জব্বার খাঁন
সিরিয়ালঃ ৩য়
প্রথমে, দরজা খুলে ভিতরে ঢুকেই সালাম দিলাম, টেবিল দূরে থাকার কারণে কাছে গিয়ে আবার সালাম দিলাম।
# চেয়ারম্যান স্যার বসতে বললেন || (হাসিখুশি ও ঠাণ্ডা মেজাজে ছিল)
১. কি নাম আপনার? নামের স্পেলিং এমন কেন, Shaeid! ? (খুবই কমন প্রশ্ন এটা)
>> স্যার, ছোটবেলাই স্কুলের টিচার যেভাবে ফর্ম ফিলআপ করিয়েছেন সেভাবেই রয়ে গেছে। তাই ‘ঈদ’ কে ‘Eid’ লিখেছেন। ( স্যারেরা নিজেরাও বলতেছিলেন, হুম! এরকম অনেক ঘটনাই আছে)
২. বাংলাদেশে মৎস্য উৎপাদন ও চাহিদা কত?
>> স্যার, উৎপাদন ৪২ লক্ষ মে.টন আর চাহিদা ৪০ লক্ষ মে.টন | মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ স্যার।
৩. মাছ ও মৎস্য এর মধ্যে পার্থক্য কি? (উত্তরে মাছ বলেছিলাম, তাই উত্তর থেকেই প্রশ্ন)
>> ঐ মুহুর্তে হতচকিত খেয়েছি। বলতে পারি নি। বের হওয়ার পর মনে পড়েছে।
৪. এই উৎপাদন ও চাহিদা একটা গ্রাফ আর্ট করে দেখান তো? (সাদা পেজ ও পেন্সিল সামনেই রাখা ছিল)
>> সাহস নিয়ে সরি বলে দিলাম। প্রথম এক্সটারনাল ধমক দিয়ে বললেন, সরি কেন? সরি আমরা নিব না! আপনি ট্রাই করেন। চেয়ারম্যান স্যারও বললেন, ট্রাই করেন, আমি সাহায্য করছি…… প্রথমে এক্স ও ওয়াই অক্ষ আঁকেন। আমি পেন্সিল নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে আঁকলাম। তারপর উৎপাদন ও চাহিদা রেখা আঁকলাম এবং একটা অংশে ইন্টারছেদ করালাম। ( অদ্ভূত একটা গ্রাফ হয়েছিলো🙄)
৫. স্যার বললেন, এই তো সুন্দর পেরেছেন, অথচ প্রথমে না করলেন! ( কিন্তু আমার মনে হয়েছে, সঠিকভাবে আঁকতে পারি নাই )
তো কবে এটা মিলে গিয়েছিল অর্থাৎ কোন সালে উৎপাদন ও চাহিদা মিলে গিয়েছিলো?
>> আমতাআমতা করে বলে দিলাম ২০১৮ সালে। (ঢিল মারছি, উত্তর জানি না) |
# প্রথম এক্সটার্নালঃ
(খুব সম্ভবত ডিএই থেকে ছিল, সব এক্সটেনশন কোয়েশ্চেন ধরেছেন, আর আমি এটাই ভালোভাবে পড়ি নাই!) ||
৬. এডাপটেশনের ধাপগুলো বলেন তো?
>> উল্টাপাল্টা বলছি। পুরাই ধুয়ে দিলো। (এরকম বেসিক জিনিস পারি না, কি শেখায় আপনাদের! 😪)
৭. গল্প বললেন, উনার বন্ধু অনেকগুলো নাড়িকেল গাছ লাগিয়েছেন, অনেক টাকা খরচ করেছেন! তো ফলন আসছে না। কি করা যায়?
>> কি বলবো বুঝতে পারছি না। উনি আবার সরিও তো নেয় না, মহাবিপদ! বললাম স্যার, প্রাকৃতিক সমস্যা মানে জলবায়ুগত সমস্যা থাকতে পারে। বোঝাতে চাইলাম উপকূলীয় এলাকায় নাড়িকেল ভালো হয়, আর কি! চেয়ারম্যান স্যার বলে উঠলেন….. কেনো, আপনি ঢাকায় নাড়িকেল গাছ দেখেন নি?
>> জ্বী স্যার, বলে চুপ (ক্লিন বোল্ড 🙁)
৮. আম গাছের বোল ফর্মেশনের সময় কি কি পরিচর্যা নিতে হয়? (বুঝতে পারি নাই ভালোভাবে)
>> বললাম, নেট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। অলটারনেটিভ বেয়ারিং এর সাথে গুলিয়ে ফেলেছি! শেষে যখন গোড়ায় পানি দেয়ার কথা বলেছি……. উনি খুশী হয়ে বললেন, আপনাকে যেই ট্রাপে ফেলতে চেয়েছি, সেই ট্রাপেই পড়েছেন। কারণ, এসময় পানি দেয়া যাবে না। আম ছোট হয়ে যাবে, ফলন কমে যাবে। (এবার আমি পুরোপুরিভাবে বিপর্যস্ত, ছেড়ে দে কেঁদে বাঁচি টাইপ 😪)
# অবশেষে দ্বিতীয় এক্সটার্নাল স্যারকে ছেড়েও দিলেন ||
৯. মাস্টার্স কিসে করেছেন?
>> সয়েল সায়িন্স
১০. মাটির উপাদানগুলো বলুন? আদর্শ মাটিতে অর্গানিক ম্যাটার কতটুকু থাকে?
>> অলরেডি পুরোই নার্ভাস হয়ে গেছি। এমন প্রশ্নেও একটু সময় নিয়ে উত্তর দিলাম।
১১. কিভাবে অর্গানিক ম্যাটার বাড়ানো যায়?
>> বললাম
১২. কয়েকটি গ্রীন ম্যানিউরিং ক্রপের নাম বলুন?
>> বললাম (২/১ বলতেই মাথা ব্ল্যাংক হয়ে গেল! 😪)
১৩. কম্পোস্ট এ নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশের পরিমাণ কেমন?
>> পড়া ছিল কিন্তু ঐ মুহুর্তে মনে করতে পারি নাই।
১৪. ভার্মি কম্পোস্ট কি?
>> বললাম
১৫. এরকম আরেকটি কম্পোস্ট আছে?
>> মনে করতে পারলাম না!
১৬. এই কম্পোস্ট দিলে অনান্য উপকারও হয়!? (ফাংগাস, ভাইরাস হয় না)
>> মনেই পরলো না আর! উনিই বলে দিলেন, ‘ট্রাইকো কম্পোস্ট’।
(স্যার অনেক শান্ত ও ভদ্র ছিলেন, টিচার হবে হয়তো। আমি জিহ্বায় কামড় দিয়ে না পারার আফসোস করতে লাগলাম ) |
চেয়ারম্যান স্যার ঘড়ি দেখে ছেড়ে দিতে বললেন। আমি সালাম দিয়ে বেরিয়ে এলাম। ‘৩ বছরের পরিশ্রম ১০-১২ মিনিটেই শেষ হয়ে গেল’ এই কথা চিন্তা করতে করতে হলে চলে এলাম।
তবে আশা ছিল, পাশ করায় দিলে হয়তো বেঁচে যেতে পারবো। তাই নিজেকে পুরোপুরিভাবে আল্লাহর উপর সোপর্দ করে দিয়েছিলাম। কারণ বিশ্বাস ছিলো, কর্ম যাই হোক না কেন, ফলাফল সম্পূর্ণ উঁনারই হাতে। |
আলহামদুলিল্লাহ!
বিসিএস(কৃষি): কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা | [সুপারিশপ্রাপ্ত ]
( ৭০ তম ব্যাচ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা )
তথ্য সুত্রঃ https://www.facebook.com/ZakirsBCSspecials/

নিজের সুবিধামত পড়ার জন্য টাইমলাইনে শেয়ার করে রাখুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 1 =