নাজমুল হাসান, APECE, DU
পররাষ্ট্র ক্যাডার (১৩তম), ৩৮তম বিসিএস
বর্তমানে কর্মরত: সহকারী পরিচালক
বাংলাদেশ ব্যাংক
আলহামদুলিল্লাহ! এক্টু দেরীতে হয়ে গেল লেখাটা।
আমার জার্নিটা খুব মজার। এক্টু শানে নুজুল আমি দিতে চাই। আমার ব্যাচমেটরা বেশীর ভাগ ৩৬ এই ক্যাডার। আমরা তখনও এমএস করছি। বিসিএস বা ব্যাংক কি জিনিশ আমার জানা নাই৷ বাবা ব্যাংকার হওয়াতে ভাল লাগত ওই দিকটা। সুট বুটের প্রতি অন্য রকম ভাল লাগা কাজ করে আমার। অনার্স শেষের অনেক দিন পরেও আমার ধারণা ছিল না বিসিএস কি জিনিস! একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্ট টাইম শিক্ষকতা শুরু করি।
২০১৭ তে যখন প্রিলি দেই তখন আমি প্রেসার নিয়ে নিয়েছিলাম। লেকচারার এর চাকরি টা চলে গিয়েছিল। এমএস ছেড়ে দেই। খুব নেরো এস্কেপে প্রিলি পাশ দেই৷ ১১০ এর জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলাম। ২০০ পেয়ে আমার কোন লাভ নাই। এক ভাই আছে নাম পার্টনার। তার একটা কথা খুবই ভাল লাগে আমার। “প্রিলি তে আমরা যা পড়ি তা দিয়া রিটেনের অনেক কাভার হয়”। লেগে পরি সেভাবেই। তখন আমি একটা রাস্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার। যেভাবেই হোক অল্প চাপে বেশী পানি আমাকে বের করতেই হবে।
রিটেনের পুরোটা টাইম আমাকে আমার এক ফ্রেন্ড খুব হেল্প করে। পরে তার চেস্টায় আমি এমএস পাশ করে ফেলি আবার রিটেনও দেই৷ আরেকজন আছে। বনসাই বলি আমি। সিটি কলেজের মেট আমার। সে না থাকলে রিটেনের অনেক কিছুই অজানা থাকত।
এর পরেই আমি আমার বিসিএস এর জার্নি ছেড়ে দেই। সেন্ট্রাল ব্যাংকার হবার গৌরব অর্জন করি। প্রথমে ১৯ ব্যাচের অফিসার এর পর ১৯ এর এডি। আমাদের আন্তবিভাগ ক্রিকেটের জন্য আমি ৪০তম রিটেন বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম। বাংলাদেশ ব্যাংক মানসিক শান্তি ও কাজ দুটার জন্য অসাধারণ প্রতিসঠান। এখানে থাকা অবস্থায় আমি কোন প্রকার পড়াশোনা ছাড়া ৩৮ এর ভাইভা এটেন্ড করি (রিটেন পর্জন্ত আমি খুবই সিরিয়াস ছিলাম)। আমার কোন মুখস্ত জ্ঞান নাই। কারেন্ট এফেয়ার্স ভাল জানতাম। ইংলিশ বুঝি কম। বোর্ডেও আমি এ কথা বলার পর স্যারগণ আমাকে ৬০% প্রশ্ন বাংলাতে করেন। জেটা পারি না বা আইডয়া কম রিস্ক না নিয়ে বিনয়ের সাথে বলে দিতাম ” স্যার সরি” এবংং আমাকে কোন মুখস্ত প্রশ্ন করাও হয় নাই। আল্লাহ বাচাইসে৷
সর্বোপরি আমাকে কেন ক্যাডার দিসে আমি জানি না। আমার নলেজ পুরাটাই প্রিলি বেজড। আমার রিটেন খাতা খুবই প্রিসাইজ৷ কোন এক্সট্রা কথা নাই। আমার লেখায় ছোট এবং স্লো। সো আমি লুজ নেয়ার থেকে প্রেজেন্টেবল হবার দিকেই বেশী খেয়াল দিয়েছিলাম। স্ট্রেংটস বলতে কারেন্ট এফেয়ার্স এন্ড আমার জেকোন বিষয়ে বাংলায় এবং ইংরেজীতে ২ পেজ লেখার খমতা ছিল। রচনা বাংলা টা ৮ (৪ পেজ এপিঠ ও পিঠ) এবং ইংরাজী ৬ (৩ পেজ এ পিঠ অপিঠ) লিখসিলাম৷ প্রিলিতে বক্স আকারে যে ইনফো পড়েছিলাম রিটেনের খাতাতে আমি তাই লিখে দিসিলাম।
নিজেকে নিয়ে ক্লিয়ার ধারণা রাখুন। সত্য বলুন। কি চান তা ঠিক করুন। অমুক ক্যাডার হয়েছে এই জন্য ক্যাডার হতে চাইলে বেশী দূর আগাতে পারবেন কিনা সন্দেহ। কাউকে ফলো করবেন না। আমি আমার দুই তিন জন পুলিশ সিনিয়র ভাই এবং এক বন্ধুর থেকে সাজেসন নিতাম। বাট ওটা ফলো করতাম না। সর্বদা ইম্প্রোভাইজ করতাম। বই খাতা ওই বাজারের গতানুগতিকগুলাই৷ আর নিউজপেপার!
রিটেনে এবং ভাইভায় নিজের স্বকীয়তার পরিচয় দিন। মাঝে মাঝে স্বপ্নের নাগাল পেতে পাগলামি করা লাগে। আমার জন্য এটাই প্রযোজ্য। আউট অফ দ্যা বক্স ভাবুন। অল্প চাপে বেশীর পানির জন্য আর এফ এল। বাজারে যেয়ে বলুন ভাল টিন চাই। তাই বলে ঢেউ টিন না। এক্সপেক্টেশন আমাদের চাপে ফেলে অনেক। কোয়ান্টিটির চেয়ে কোয়ালিটি ম্যাটার্স। আর সাথে ভাগ্য। আমি লকডাউনে আমার মায়ের থালা বাটি মাজছিলাম। আল্লাহ মনে হয় এই জন্য কিছু প্রতিদান দিলেন।
ভাল থাকবেন। আমার সুস্থতার জন্য দোয়া চাইছি। ভাইভা অভিজ্ঞতাটা আরেক দিন ইনশাল্লাহ।
তথ্য সুত্রঃ https://www.facebook.com/ZakirsBCSspecials/