নাসরিন রিমা মেঘলা ম্যাডাম এর ভাইভা

৩৮তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত
নাসরিন রিমা মেঘলা, সমাজবিজ্ঞান, ঢাবি !
ভাইভা অভিজ্ঞতা
বোর্ডঃ হামিদুল হক স্যার
সিরিয়ালঃ ২
সময়ঃ ২০ মিনিট
(উল্লেখ্য যা যা পড়ে গেছি তার কিছুই জিজ্ঞাসা করেন নি)
১. প্রথমে ঢুকতেই স্যার বসতে বললেন। পেপারস হাতে নিয়ে দেখতে লাগলেন এবং পড়ে পড়ে বলতে লাগলেন এবং আমি জ্বি স্যার বলছিলাম।
স্যার বললেন, নাম কি শুধু নাসরিন? এই টুকুই? (আমি জানতাম এই প্রশ্নটা আমাকে করবেই। এই পর্যন্ত যত জায়গায় গেছি সবারই এই প্রশ্নটা ছিলো। এই জন্য বিভিন্ন রকম করে উত্তরও রেডি করে রাখছিলাম। কিন্তু সেগুলা কিছুই তখন মনে পড়ছিলো না)
তখন হুট করে মাথায় এটা আসলো। বললাম, স্যার, আমার পুরো নাম নাসরিন রিমা। ছোটবেলায় আসলে আমাদের মধ্যে এরকম একটা ফলস কনশাসনেস ছিলো যে, বড় নাম দিলে পরবর্তীকালে হয়ত বৃত্ত ভরাট বা স্পেলিং মিস্টেক হতে পারে সেইজন্য আমাদের স্কুলের সবাই আমরা ছোট করে নাম দিয়েছিলাম রেজিস্ট্রেশনের সময়। স্যার পরে আমরা বুঝতে পেরেছি এটা আমাদের ফলস কনশাসনেস ছিলো।
তখন এক্সটারনাল স্যার ও চেয়ারম্যান স্যার দুইজনেই বললেন, সেটাই ত। এত বড় বড় নাম দিয়ে কি হয়! এত এত নাম মনে রাখতেই ঝামেলা। একটা দিলেই ত হয়।
২. এরপরে চেয়ারম্যান স্যার আমার বিশেষ দুইটা দক্ষতা বলতে বললেন যা অন্যদের নেই। আমি আকাশ থেকে পড়লাম। এত জীবনেও ভাবিনি। ছোটবেলায় হ্যান্ডিক্রাফট জিনিসপত্র বানাতাম বাশ, বেত, হোগলা, মাটি দিয়ে। আম্মুর থেকে শিখেছিলাম। কিন্তু সেগুলা কিছুই আমার মাথায় আসেনি। 😭😭
আমি সিম্পলি বললাম, স্যার, স্কুলে যখন পড়তাম তখন একটু একটু কবিতা আবৃত্তি শিখেছিলাম। এছাড়া পড়াশুনা ছাড়া আর তেমন কোনো দক্ষতা আমার নেই স্যার। (ক্যাডার হবার সব স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে সাহস নিয়ে এই উত্তরটা দিয়েছিলাম।)
পাশে এক্সটারনাল বললেন, দক্ষতা থাকবে না কেন? অবশ্যই আছে। সবারই থাকে। তোমারও আছে। সুন্দর করে কথা বলতে পারাও একটা দক্ষতা। (এটা হয়ত আমার কথা বলা দেখে বলছিলেন।)
এবার চেয়ারম্যান স্যার বললেন, তুমি রান্না করতে পারো না? আমি বললাম, পারি স্যার। স্যার বললেন, তাহলে এটাও ত তোমার একটা দক্ষতা। এইখানে পাকনামি করে বলে বসলাম, স্যার ঘরের কাজকর্ম তো জিডিপিতে হিসাব করা হয়না, এই জন্য এটাকে আমাদের সোসাইটিতে অইভাবে দক্ষতা হিসেবে ধরা হয় না।
এইটা নিয়ে তারা দুইজন হাবিজাবি কিসব যেন বলতেছিলেন তা মনে নেই ঠিক।
কোথায় থাকি? বিয়ে কবে করেছি? হাজব্যান্ড কি করে এসব জানতে চাইলেন।
তারপর চেয়ারম্যান স্যার বললেন, বাংলাদেশের জিডিপির পরিমান কত? অর্থনীতির প্রধান দুইটা খাত কি?
সম্ভবত স্যার কৃষি খাতের কথা শুনতে চাচ্ছিলেন কিন্তু আমি সেটা না বলে রেমিট্যান্স আর গার্মেন্টস এর কথা বলছিলাম।
স্যার তখন BRRI, IRRI এর কথা বলছিলেন। ইরির সদর দপ্তর জানতে চাইলেন।
এরপর স্যার নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে এমন দুইটা সাম্প্রতিক ঘটনার কথা বলতে বলেছিলেন। ক্ষমতায়ন আর মর্যাদা যে আলাদা সেটাও বুঝিয়ে দিয়ে বললেন যে ক্ষমতায়ন যেন না বলি। আমি একটা বলতে পেরেছিলাম। বাবার নামের পাশে মায়ের নাম সংযোজন।
প্লাস্টিক ইকনমির কি একটা টার্ম বলেছিলেন সেটা ভুলে গেছি। তার দুইটা উদাহরন বলতে বলেছিলেন। আমি একটা পেরেছি। আর মাথায় আসছিলো না। কিন্তু এইগুলা ডিপার্টমেন্টে বহুবার পড়েছি।
এক্সটারনাল একজন আমার ডিপার্টমেন্ট থেকে কিছু প্রশ্ন করেছিলেন (সবগুলা মনে নেই এখন)। কয়েকটা খুবই সুন্দর করে উত্তর দিয়েছি। সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন। একটা পারিনি কারন অইটা ডিপার্টমেন্টে কখনোই পড়িনি।
আবার চেয়ারম্যান স্যার প্রশ্ন করলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ৩ মিনিট ইংরেজিতে বলো।
আমি ২৬ শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বলেছি। তবে ৩ মিনিটের কম হয়েছে সম্ভবত। ওনারা তাতে অখুশি হননি মনে হলো।
সবশেষে আরেকজন এক্সটারনাল প্রশ্ন করলেন। ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটে সম্ভবত প্যাটেন্ট নিয়ে। বলেছিলেন এই রুমেই আছে এমন একটা উদাহর দিতে। আমি রুমের চারদিকে তাকিয়ে কিছু বই ছাড়া আর কিছু খুঁজে না পেয়ে বললাম, বই স্যার। 😃
স্যার বললেন বইয়ের প্যাটেন্ট হয়না। কপিরাইট হয়। এটা মোবাইল ফোন হবে। আমাদের সবার কাছেই ফোন আছে।
এরপর তিনি রবীন্দ্রনাথের একটা কবিতা শুনিয়ে বললেন, এখানে একটা প্যাটেন্ট আছে। বলতে হবে সেটা কি?
কবিতাটায় ঢাকাই শাড়ি নামটা শুনে বললাম জামদানী শাড়ি। স্যার বললেন, কোন ধরনের প্যাটেন্ট এটা? আমি অরিজিন বলেছি। কিন্তু এটা হবে ইন্ট্যাঞ্জিবল। বের হয়ে মনে পড়েছে পরে।
সম্ভবত কতটা উত্তর পেরেছি এটা ওনারা দেখেন না। কিভাবে কথা বলি, কিভাবে উত্তর দেই, এপ্রোচ কেমন, উত্তরের মধ্যে দৃষ্টভঙ্গী কেমন সেটা ওনারা খেয়াল করেন খুব।
নাসরিন
প্রশাসন ক্যাডার (সুপারিশপ্রাপ্ত)
৩৮ বিসিএস।
মেধাক্রমঃ ১১৩
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
লেকচারার
ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া
তথ্য সুত্রঃ https://www.facebook.com/ZakirsBCSspecials/

নিজের সুবিধামত পড়ার জন্য টাইমলাইনে শেয়ার করে রাখুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − five =